২০১৪ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর, সন্ধ্যার দিকে সোহান সহ ক্যাম্পাসে ঘুরছি। হঠাৎ একনাম্বার থেকে ফোন আসল।


Me: Hello..
Unknown Number: Is It Azmain Islam Nishan?
Me: Yes.
Unknown Number: I am from Indian High Commission. 
        Congratulations,You got the ICCR scholarship in 
        Jawaharlal Nehru Technological University. 
        Come tomorrow & collect your offer letter.
Me: Okay. (উত্তেজনার কারনে মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হয় নি)

এতদিনে আমি যে এই বৃত্তির জন্য এপ্লাই করেছিলাম ভুলেগেছি(এপ্লাই করছিলাম জানুয়ারি মাসে)। বলা চলে বৃত্তির আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। হঠাৎ ফোন পেয়ে পড়ে গেলামদ্বিধাদ্বন্দে।কি করি এখন!! বাসায় ফোন দিলাম। বললো অফার লেটার টা নিয়ে আসতে,যাব কিযাব না তা পরে দেখা যাবে। সেদিন রাতেই বাসে করে চলে গেলাম ঢাকা।সকালে ঢাকা পৌছেকিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে গেলাম হাই কমিশনে। কিছুক্ষন পর হাতে পেলাম অফার লেটারটি –

“I have been selected to persue B.Tech in Computer Science & Engineering at Jawaharlal Nehru Technological University Anantapur, Andhrapradesh!!”

কিন্তু অফার লেটার এ দেখি আমাকে ১০ তারিখেরমধ্যে কলেজে ভর্তি হতে হবে। পড়ে গেলাম মহা মুশকিল এ। এত কম সময়ের মধ্যে কিভাবে কিকরব!! কলেজ সম্পর্কে খোঁজ নেয়া শুরু হয়ে গেলো। যাব কি যাব না! কতজনের সাথে যোগাযোগ করলাম তার ইয়ত্তা নেই। কেউ বলে যাও ভাল হবে,আবার কেউ বলে না যাওয়ার জন্য। বাসা থেকেসেদিন ই পাসপোর্ট টা কুরিয়ার করে দিয়েছিলো। এর মধ্যে চলতে থাকলো এর ওর সাথে কথাবলা। ৫ তারিখে পাসপোর্ট জমা দিলাম ভিসার জন্য। তখনও আমি সিওর না যে আমি যাব কিনা!! ৬ তারিখে ভিসা হয়ে গেলো।

ফেরত আসলাম কুয়েটে ভর্তি বাতিলের জন্য। ৭ তারিখ সকালে পৌছেই শুরু হয়ে গেলো দৌড়াদৌড়ি। ভর্তি বাতিল করা যে কি ঝামেলা তা হাড়ে হাড়ে সেদিন টের পেয়েছিলাম। এমন কিছু জায়গায় আমকে যেতে হয়েছে,যেটার নামওশুনি নাই। ঠিকভাবে মনে নেই কতজায়গায় আমাকে সেদিন যেতে হয়েছিলো! প্রত্যেক জায়গায় জিজ্ঞাসা করেছি আমি ওমুক বৃত্তি পেয়েছি,যাওয়াটা কি ঠিক হবে? এখানেও হ্যা/না উত্তর পেয়েছি। যখন কেউ ভাল বলছিলো তখন কিছুটা সাহস পাচ্ছিলাম আবার কেউ নীতিবাচক কিছু বললে হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। বিকালের দিকে সব কার্যক্রম শেষ হয়। সন্ধ্যায় খুলনা থেকে দিনাজপুরের ট্রেন ধরতে হবে। অল্প কিছু যা সময় বাকি ছিলো ব্যাগ গুছানো,বন্ধুদের আরবড় ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার কাজটা সেরে ফেলেছি। (সময় সল্পতার কারনে সবার সাথেদেখা করা সম্ভব হয় নি,তাই আমি দুঃখিত)। সন্ধ্যায় সোয়েব,নির্ঝর,সোহান স্টেশনে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে গেলো। মূহুর্তটা কি ছিলো,তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।

সকালে দিনাজপুর পৌছলাম। এরপর ৮/৯ তারিখ জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম। আরো যাবতীয় যা কাজ ছিলো তা শেষ করলাম। এরমাঝে অনেক ধরনের কথা চলতে থাকলো। সবার কথা শুনে কখনও ভাবছিলাম ভুল করছি না তো! আবার ভাবছিলাম যা হবে ভালোর জন্যই হবে। এই ২ দিনের মধ্যে আম্মু যত কিছু করে খাওয়ানোসম্ভব খাইয়ে দিলো। আব্বুর আগেই মেডিকেল ভিসা করা ছিলো। ১১ তারিখ সকালে সবার কাছ থেকেবিদায় নিয়ে আব্বু আর আমি রওনা দিয়ে দিলাম নতুন এক শহর অনন্তপুর এর উদ্দেশ্যে। কাঁদবনা ভেবেও সেদিন কেঁদেছিলাম কিন্তু তা ছিলো সকলের অগোচরে।

দুপুরের দিকে ক্রস করলাম বাংলাদেশ বর্ডার। হিলি থেকে কলকাতা যাওয়ার অভিজ্ঞতা জীবনের এক কালো অধ্যায়(ট্রেনেরটিকেট না পাওয়ায় জেনারেল বগিতে যেতে হয়েছিলো)। কলকাতায় গিয়ে সেদিনের ট্রেনের টিকেট পেলাম না। তাই অগ্যতা একদিন থাকতে হলো কলকাতায়। ১৩ তারিখ রাতে অনিক(another scholar) সহ রওনা দিলামকলকাতা থেকে। প্রথম এত লম্বা জার্নি(৩৬ ঘন্টা ট্রেনে) সাথে বিরাজ করছিলো উত্তেজনা।

১৫ তারিখ সকালে এসে পৌঁছলাম কলেজ ক্যাম্পাস এ। সকালে কলেজের সামনে একদোকানে নাস্তা করতে ঢুকে দেখি ভাপা পিঠার মত ছোট ছোট যার নাম ইডলি যা এখানকারপ্রথম খাবার মুখে দিয়েছিলাম কিন্তু খাইতে পারি নাই(এখন পর্যন্ত আর খাওয়ার সাহস হয়নাই)। হোস্টেল এ গিয়ে দেখি চিড়িয়াখানা! পশু পাখির মত বন্দী অবস্থা সবার। হোস্টেল থেকেকেউ বের হতে পারে না, ক্লাসে লাইন ধরে নিয়ে যায়,লাইন ধরে নিয়ে আসে আরো ব্লা ব্লাব্লা! আব্বু কিছুদিন পর বিদায় নিয়ে চলে গেলো। এই অনন্তপুরে পড়ে রইলাম আমরা চার বাংলাদেশী। শুরুর দিকের দিনগুলো ছিলো খুবই কষ্টকর। খাইতে পারি না এখানকার হোস্টেল এরখাবার, বাইরে পারি না ঘুরতে। ধীরে ধীরে সব পরিবর্তন হতে লাগলো। আমরা ধীরে ধীরে শিখতেশুরু করলাম এখানে কিভাবে টিকে থাকতে হয়। ৩-১১ সেপ্টেম্বর দিনগুলো ছিলো ঝড়ের মত। কিথেকে কি হয়ে গেলো যে নিজেকে গুছিয়ে নিতে বেশ সময় লেগেছিলো। সেই দিনগুলোতে যারা আমাকে সাহস যুগিয়েছিলো তাদের ধন্যবাদ।

দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গেলো। এখন আমি ভালো এক হোস্টেল এ থাকি,হোস্টেল এর খাওয়ার মান ভাল। বাইরে মুক্ত পাখির মত ঘুরেবেড়াই। আশেপাশের সবকিছুই ধীরে ধীরে ঠিক হতে চলেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার যে ভবঘুরে স্বভাব তার স্বাদ মিটছে। প্রথম সেমিস্টারে Bangalore & Mysore এবং দ্বিতীয় সেমিস্টারে Hyderabad, তৃতীয় সেমিস্টার upcoming. এখন আমি আগের তুলনায় ভালো আছি। অথচ এক বছর আগেই ভাবছিলাম আমি হয়তো এখানে টিকতে পারব না!

সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

N.B: Seek Help Through Patience & Prayer , Indeed ALLAH Is With Those Who Are Patient.